নোয়াখালী জেলা'র মর্যাদা পায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক এদেশে জেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় থেকেই। ১৭৭২ সালে কোম্পানীর গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এদেশে প্রথম আধুনিক জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা নেন। তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯টি জেলায় বিভক্ত করে প্রতি জেলায় একজন করে কালেক্টর নিয়োগ করেন। এ ১৯টি জেলার একটি ছিল কলিন্দা। এ জেলাটি গঠিত হয়েছিল মূলতঃ নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে। কিন্তু ১৭৭৩ সালে জেলা প্রথা প্রত্যাহার করা হয় এবং প্রদেশ প্রথা প্রবর্তন করে জেলাগুলোকে করা হয় প্রদেশের অধীনস্থ অফিস।
১৭৮৭ সালে পুনরায় জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং এবার সমগ্র বাংলাদেশকে ১৪টি জেলায় ভাগ করা হয়। এ ১৪টির মধ্যেও ভুলুয়া নামে নোয়াখালী অঞ্চলে একটি জেলা ছিল। পরে ১৭৯২ সালে ত্রিপুরা নামে একটি নতুন জেলা সৃষ্টি করে ভুলুয়াকে এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠার সময় পর্যন্ত এ অঞ্চল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
আর একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আধুনিক অর্থে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন হয় ১৭৯০ সালে। এর পূর্বে কোম্পানীর শাসন বলতে আইনত ছিল শুধু বাংলার দেওয়ানী বা রাজস্ব শাসন। আর নিজামত বা সিভিল প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল বাংলার নবাবের হাতে। জেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ সময় পর্যন্ত কোম্পানী কর্তৃক যে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় তা শুধু রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব থেকে কোম্পানীর আয় বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু ১৭৯০ সালে কোম্পানীর গভর্ণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশ নবাবকে তার নিজামত ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেন এবং রাজস্ব প্রশাসনের সাথে সমস্ত ফৌজদারী বিচার ও পুলিশী ক্ষমতা জেলা কালেক্টর এর উপর অর্পন করেন। ফলে সমাপ্ত হয় বাংলার নবাবী এবং প্রতিষ্ঠিত হয় সমগ্র বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একচ্ছত্র শাসন। আর এ শাসন পরিচালনার সমূদয় ক্ষমতা কেন্দ্রভূত করা হয় কালেক্টর পরিচালিত জেলা প্রশাসন ব্যবস্থায়।
উপরের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা হলে সার-সংক্ষেপ দাঁড়ায় এই যে, বাংলাদেশে জেলা প্রশাসনের সূত্রপাত হয় ১৭৭২ সালে সরকারের প্রতিভূ হিসেবে শুধুমাত্র রাজস্ব প্রশাসন পরিচালনার জন্য। কলিন্দা নামে তখন নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরের বছর জেলা হয়ে যায় প্রদেশের অধীনসহ প্রশাসনিক ইডনিট। ১৭৮৭ সালে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা পূনঃ প্রবর্তন করা হলে ভুলুয়া নামে নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৯০ সালে আধুনিক জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় এবং তখনও ভুলুয়া নামে নোয়াখালী জেলা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ১৭৯২ থেকে ১৮২১ পর্যন্ত নোয়াখালী ছিল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত। ১৮২১ সালে পূনরায় জেলার মর্যাদা নিয়ে ভুলুয়া নামে নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরের বছর অর্থাৎ ১৮২২ সালে নোয়াখালী জেলার পূর্নাঙ্গ জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
উপসংহারে বলা যায় যে, নোয়াখালী জেলা সৃষ্টি হয় ১৭৭২ সালে। মাঝে ২৯ বছর (১৭৯২-১৮২১) বিরতির পর ১৮২১ সালে পূনরায় নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও পূর্ণাঙ্গ জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় পরের বছর। উপরোক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, আধুনিক নোয়াখালী জেলা ও জেলা প্রশাসন ১৭৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস